SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - বাংলা - সাহিত্যপাঠ | NCTB BOOK


সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে তারা বেশ সন্তুষ্ট হলো। প্রথম প্রাণীটি বলল, ‘এখানে প্রাণের বিকাশ হয়েছে।'
'হ্যাঁ।'
‘বেশ পরিণত প্রাণ। অনেক ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্রজাতি। একেবারে ক্ষুদ্র এককোষী থেকে শুরু করে লক্ষ-কোটি কোষের প্রাণী।'
দ্বিতীয় প্রাণীটি আরও একটু খুঁটিয়ে দেখে বলল, 'না। আসলে এটি জটিল প্রাণ নয়। খুব সহজ এবং সাধারণ।' ‘কেন? সাধারণ কেন বলছ? তাকিয়ে দেখ কত ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির প্রাণ । শুরু হয়েছে ভাইরাস থেকে, প্রকৃতপক্ষে ভাইরাসকে আলাদাভাবে প্রাণহীন বলা যায়। অন্য কোনো প্রাণীর সংস্পর্শে এলেই তার মাঝে জীবনের লক্ষণ দেখা যায় । তারপর রয়েছে এককোষী প্রাণ, পরজীবী ব্যাকটেরিয়া। তারপর আছে গাছপালা, এক জায়গায় স্থির । সালোকসংশ্লেষণ দিয়ে নিজের খাবার নিজেই তৈরি করে নিচ্ছে। পদ্ধতিটা বেশ চমৎকার। গাছপালা ছাড়াও আছে কীটপতঙ্গ । তাকিয়ে দেখ কত রকম কীটপতঙ্গ। পানিতেও নানা ধরনের প্রাণী আছে, তাদের বেঁচে থাকার পদ্ধতি ভিন্ন । ডাঙাতেও নানা ধরনের প্রাণী, কিছু কিছু শীতল রক্তের কিছু কিছু উষ্ণ রক্তের। উষ্ণ রক্তের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের একটির ভিতরে আবার অত্যন্ত নিম্নশ্রেণির বুদ্ধির বিকাশ হয়েছে। কোথাও কোথাও প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্ৰণ করার চেষ্টা করছে।'
“কিন্তু সব আসলে বাহ্যিক। এই ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মাঝে আসলে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই।' প্রথম প্রাণীটি বলল, ‘আমি বুঝতে পারছি না তুমি কেন এই পার্থক্যকে বাহ্যিক বলছ । ‘তুমি আরেকটু খুঁটিয়ে দেখ। এই ভিন্ন প্রজাতি কী দিয়ে তৈরি হয়েছে দেখ । প্রথম প্রাণীটি একটু খুঁটিয়ে দেখে বিস্ময়সূচক শব্দ করে বলল, ‘তুমি ঠিকই বলেছ। এই প্রাণীগুলো সব একইভাবে তৈরি হয়েছে । সব প্রাণীর জন্য মূল গঠনটি হচ্ছে ডিএনএ দিয়ে, সব প্রাণীর ডিএনএ একই রকম, সবগুলো একই বেস পেয়ার দিয়ে তৈরি। সবচেয়ে সহজ এবং সবচেয়ে জটিল প্রাণীটির একই রকম গঠন। প্রাণীটির বিকাশের নীলনকশা এই ডিএনএ দিয়ে তৈরি করে রাখা আছে। কোনো প্রাণীর নীলনকশা সহজ, কোনো প্রাণীর নীলনকশা জটিল—এটুকুই হচ্ছে পার্থক্য।'
'হ্যাঁ।' দ্বিতীয় প্রাণীটি বলল, ‘আমরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সব গ্রহ-নক্ষত্র ঘুরে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণীগুলোকে সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছি—কাজটি সহজ নয় । এই গ্রহ থেকেও সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণীটি খুঁজে বের করতে হবে—যেহেতু সবগুলো প্রাণীর গঠন একই রকম, কাজটি আরও কঠিন হয়ে গেল।'
‘সময় নষ্ট না করে কাজ শুরু করে দেওয়া যাক।'
'হ্যাঁ'।
‘এই ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া বেশি ছোট, এর গঠন এত সহজ এর মাঝে কোনো বৈচিত্র্য নেই।' ‘হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ। আবার এই হাতি বা নীল তিমি নিয়েও কাজ নেই, এদের আকার বেশি বড়। সংরক্ষণ করা কঠিন হবে।'
‘গাছপালা নেওয়ারও প্রয়োজন নেই। এরা এক জায়গায় স্থির থাকে। যেখানে গতিশীল প্রাণী আছে সেখানে স্থির প্রাণ নেওয়ার কোনো অর্থ হয় না।'
‘এই প্রাণীটি সম্পর্কে তোমার কী ধারণা? এটাকে বলে সাপ '
‘সাপটি বেশ কৌতূহলোদ্দীপক, কিন্তু এটা সরীসৃপ। সরীসৃপের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত নয়, ঠাণ্ডার মাঝে এরা
কেমন যেন স্থবির হয়ে পড়ে। প্রাণিজগতে সরীসৃপ একটু পিছিয়ে পড়া প্রাণী।'
“ঠিকই বলেছ। তা হলে সরীসৃপ নিয়ে কাজ নেই । প্রথম প্রাণীটি বলল, ‘আমার এই প্রাণীটি খুব পছন্দ হয়েছে। এটাকে বলে পাখি। কী চমৎকার! আকাশে উড়তে
পারে!' দ্বিতীয় প্রাণীটি বলল, 'হ্যাঁ, আমারও এটি পছন্দ হয়েছে। আমরা এই প্রাণীটিকে নিতে পারি। তবে—'
‘তবে কী?”
‘এদের বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আমি খুব নিশ্চিত নই। আমাদের কি এমন কোনো প্রাণী নেওয়া উচিত নয় যারা
বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে, যারা কোনো ধরনের সভ্যতা গড়ে তুলেছে?' “ঠিকই বলেছ। তা হলে আমাদের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের একবার দেখা উচিত।'
‘এই দেখ একটা স্তন্যপায়ী প্রাণী। কী সুন্দর হলুদের মাঝে কালো ডোরাকাটা! এর নাম বাঘ। '
‘হ্যাঁ প্রাণীটি চমৎকার। কিন্তু এটি একা একা থাকতে পছন্দ করে। একটা সামাজিক প্রাণী নিতে পারি না?’ ‘কুকুরকে নিলে কেমন হয়? এরা একসাথে থাকে। দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় ৷ প্রথম প্রাণীটি বলল, ‘এই প্রাণীটিকে মানুষ পোষ মানিয়ে রেখেছে, প্রাণীটা নিজেদের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলছে।'
“ঠিকই বলেছ, গৃহপালিত প্রাণীগুলোর মাঝে স্বকীয়তা লোপ পেয়ে যাচ্ছে। একটা খাঁটি প্রাণী নেওয়া প্রয়োজন ৷
হরিণ নিলে কেমন হয়?”
‘তৃণভোজী প্রাণী। তার অর্থ জান?'
'কী?'
‘এদের দীর্ঘ সময় খেতে হয়। বেশির ভাগ সময় এটা ঘাস লতাপাতা খেয়ে কাটায়।’ ‘ঠিকই বলেছ। আমরা দেখছি কোনো প্রাণীই পছন্দ করতে পারছি না ।'
‘আমার একটা জিনিস মনে হচ্ছে।'
'কী?'
‘এই গ্রহটিতে যে প্রাণীটি সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সেই প্রাণীটি নিলে কেমন হয়?’ “কোন প্রাণীর কথা বলছ?”
'মানুষ ।’
'মানুষ?'
‘হ্যাঁ। দেখ এদের একটা সামাজিক ব্যবস্থা আছে। সমাজবদ্ধ হয়ে থাকে। এদের কেউ শ্রমিক, কেউ সৈনিক, কেউ বুদ্ধিজীবী।'
“ঠিকই বলেছ।’
‘এই দেখ এরা শহর-বন্দর-নগর তৈরি করেছে। কত বিশাল বিশাল নগর তৈরি করেছে।'
‘শুধু তাই না, দেখ এরা চাষাবাদ করছে। পশুপালন করছে।'
‘যখন কোনো সমস্যা হয় তখন এরা দলবদ্ধভাবে সেটা সমাধান করার চেষ্টা করে।' “নিজেদের সভ্যতা গড়ে তোলার জন্য এদের কত আত্মত্যাগ রয়েছে দেখেছ?'
“কিন্তু আমার একটা জিনিস মনে হচ্ছে- '
“তুমি কি সত্যিই বিশ্বাস কর মানুষ এই গ্রহের শ্রেষ্ঠ প্রাণী?’
‘কী ? ’
‘তুমি কেন এটা জিজ্ঞেস করছ?'
‘এই পৃথিবীর দিকে তাকাও। দেখেছ বাতাসে কত দূষিত পদার্থ? কত তেজস্ক্রিয় পদার্থ? বাতাসের ওজোন স্তর কেমন করে শেষ হয়ে যাচ্ছে দেখেছ? গাছ কেটে কত বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংস করেছে দেখেছ?”
“এর সবই কি মানুষ করেছে?'
'হ্যাঁ।'
‘কী আশ্চর্য! আমি ভেবেছিলাম এরা বুদ্ধিমান প্রাণী।'
‘এরা একে অন্যের ওপর নিউক্লিয়ার বোমা ফেলছে। যুদ্ধ করে একজন আরেকজনকে ধ্বংস করে ফেলছে। প্রকৃতিকে এরা দূষিত করে ফেলেছে।'
“ঠিকই বলেছ।’
প্রাণী দুটি কিছুক্ষণ বেশ মনোযোগ দিয়ে মানুষকে লক্ষ করল, তারপর প্রথম প্রাণীটি বলল, ‘না মানুষকে নেওয়া ঠিক হবে না। এরা মাত্র দুই মিলিয়ন বছর আগে জন্ম নিয়েছে, কিন্তু এর মাঝেই শুধু যে নিজেদের বিপন্ন করেছে তাই নয়, পুরো গ্রহটিকে ধ্বংস করে ফেলার অবস্থা করে ফেলেছে।'
দ্বিতীয় প্রাণীটি বলল, মহাজাগতিক কাউন্সিল আমাদের কিউরেটরের দায়িত্ব দিয়েছে। আমাদের খুব চিন্তা-ভাবনা করে প্রাণীগুলো বেছে নিতে হবে। এই সুন্দর গ্রহ থেকে এ রকম স্বেচ্ছা ধ্বংসকারী প্রাণী আমরা নিতে পারি না । কিছুতেই নিতে পারি না ।'
প্রাণী দুটি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে এবং হঠাৎ করে প্রথম প্রাণীটি আনন্দের ধ্বনি দিয়ে ওঠে। দ্বিতীয় প্রাণীটি অবাক হয়ে বলল, ‘কী হয়েছে?'
‘আমি একটি প্রাণী খুঁজে পেয়েছি। এরাও সামাজিক প্রাণী। এরাও দল বেঁধে থাকে। এদের মাঝে শ্রমিক আছে সৈনিক আছে। বংশ বিস্তারের জন্য চমৎকার একটা পদ্ধতি আছে। দেখ নিজেদের থাকার জন্য কী চমৎকার বিশাল বাসস্থান তৈরি করেছে!”
দ্বিতীয় প্রাণীটি বলল, “ঠিকই বলেছ। দেখ এরাও মানুষের মতো চাষাবাদ করতে পারে। মানুষ যেরকম নিজেদের সুবিধার জন্য পশুপালন করতে পারে এদেরও ঠিক সেরকম ব্যবস্থা রয়েছে।'
‘কী সুশৃঙ্খল প্রাণী দেখেছ?'
‘শুধু সুশৃঙ্খল নয়, এরা অসম্ভব পরিশ্রমী, গায়ে প্রচণ্ড জোর, নিজের শরীর থেকে দশগুণ বেশি জিনিস অনায়াসে নিয়ে যেতে পারে।'
‘হ্যাঁ। কোনো ঝগড়াবিবাদ নেই। কে কোন কাজ করবে আগে থেকে ঠিক করে রেখেছে। কোনো রকম অভিযোগ নেই, যে যার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।' ‘অত্যন্ত সুবিবেচক। আগে থেকে খাবার জমিয়ে রাখছে। আর বিপদে কখনো দিশেহারা হয় না। অন্যকে বাঁচানোর জন্য অকাতরে প্রাণ দিয়ে যাচ্ছে।'
‘মানুষের বয়স মাত্র দুই মিলিয়ন বছর, সেই তুলনায় এরা সেই ডাইনোসরের যুগ থেকে বেঁচে আছে।' ‘প্রকৃতির এতটুকু ক্ষতি করেনি। আমি নিশ্চিত মানুষ নিজেদের ধ্বংস করে ফেলার পরও এরা বেঁচে থাকবে। পৃথিবী এক সময় এরাই নিয়ন্ত্রণ করবে।'
“ঠিকই বলেছ। তা হলে আমরা এই প্রাণীটাই নিয়ে যাই?”
‘হ্যাঁ। পৃথিবীর এই চমৎকার প্রাণীটা নেওয়াই সবচেয়ে সুবিবেচনার কাজ হবে।'
দুজন মহাজাগতিক কিউরেটর সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহটি থেকে কয়েকটি পিঁপড়া তুলে নিয়ে গ্যালাক্সির অন্য গ্রহ-নক্ষত্রে রওনা দেয়, দীর্ঘদিন থেকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ঘুরে ঘুরে তারা গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী সংগ্রহ করছে ।
 

Content added || updated By


মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩এ ডিসেম্বর পিতার কর্মস্থল সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শহিদ ফয়জুর রহমান আহমেদ, জননী আয়েশা আখতার খাতুন। তাঁর পৈতৃক নিবাস নেত্রকোনা জেলায়। তাঁর মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত হয় বগুড়ায়। ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাসের পর তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে দেশে প্রত্যাবর্তন করে তিনি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল বাংলা ভাষায় রচিত সায়েন্স ফিকশন বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির একচ্ছত্র সম্রাট। ‘কপোট্রনিক সুখ দুঃখ' রচনার মাধ্যমে এ-ধারার সাহিত্যে তাঁর প্রথম আবির্ভাব। তিনি একই সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানী ও স্বপ্নচারী রোমান্টিক । তাঁর সাহিত্যেও বিজ্ঞানের বস্তুনিষ্ঠা ও মানবীয় কল্পনার সম্মিলন ঘটেছে। মাতৃভূমি, মানুষ ও ধরিত্রীর প্রতি নৈতিক দায়বদ্ধতা তাঁর সাহিত্যিক মানসের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের বিজ্ঞানমুখী তরুণ-প্রজন্মের তিনি আদর্শ । কিশোর উপন্যাস এবং ছোটগল্প রচনাতেও তিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। কিশোর উপন্যাস ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ' এবং ‘আমি তপু তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা। ‘মহাকাশে মহাত্রাস’, ‘টুকুনজিল”, “নিঃসঙ্গ গ্রহচারী’, ‘একজন অতিমানবী’, ‘ফোবিয়ানের যাত্রী'সহ অনেক পাঠকপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির তিনি স্রষ্টা। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞান লেখক হিসেবে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন ।
 

Content added || updated By

মহাজাগতিক - মহাজগৎ সম্বন্ধীয়।
কিউরেটর - জাদুঘর রক্ষক। জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক তথা পরিচালক। 
তেজস্ক্রিয় পদার্থ - যা থেকে এমন রশ্মির বিকিরণ ঘটে যা অস্বচ্ছ পদার্থের মধ্য দিয়ে দেখা যায় ।
ওজোন স্তর - বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে ওজোন গ্যাসে পূর্ণ স্তর বিশেষ, যা আমাদের সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে ।
নিউক্লিয়ার বোমা - পারমাণবিক বোমা
ডাইনোসর - বর্তমানে লুপ্ত প্রাগৈতিহাসিক কালের বৃহদাকার প্রাণী ।
গ্যালাক্সি - ছায়াপথ।
 

Content added By


‘জলজ' গ্রন্থের অন্তর্গত “মহাজাগতিক কিউরেটর” গল্পটি মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘সায়েন্স ফিকশন সমগ্র তৃতীয় খণ্ড (২০০২) থেকে গৃহীত হয়েছে। ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি হলেও এতে দেশকালের প্রভাবপুষ্ট মানবকল্যাণকর্মী লেখকের জীবনদৃষ্টির প্রতিফলন ঘটেছে। অনন্ত মহাজগৎ‍ থেকে আগত মহাজাগতিক কাউন্সিলের দুজন কিউরেটরের বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর নমুনা সংগ্রহে সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ পৃথিবীতে আগমনের তথ্য দিয়ে গল্পটির সূচনা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণীর নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে দুজন কিউরেটরের সংলাপ বিনিময়ের মধ্য দিয়ে গল্পটি নাট্যগুণ লাভ করেছে। প্রজাতির যাচাই-বাছাই কালে পৃথিবীর নানা প্রাণীর গুণাগুণ কিউরেটরদের সংলাপে উঠে আসে। ‘মানুষ' নামক প্রজাতি বিবেচনার ক্ষেত্রে কিউরেটর দুইজনের বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা মূলত কল্পকাহিনির লেখকেরও মনের কথা। দুইজন কিউরেটর পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে মনুষের কারণেই হ্রাস ঘটে যাচ্ছে ওজোন স্তরের। মানুষই নির্বিচারে গাছ কেটে ধ্বংস করে চলেছে প্রকৃতির ভারসাম্য। পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে মানুষই নিউক্লিয়ার বোমা ফেলছে একে অন্যের ওপর । এই পরিস্থিতিতেও তারা পৃথিবীর বুদ্ধিমান বলে কথিত। ‘মানুষ’ প্রজাতির নির্বুদ্ধিতায় তারা শঙ্কিত হয়। অবশেষে তারা পরিশ্রমী সুশৃঙ্খল সামাজিক প্রাণী পিঁপড়াকেই শনাক্ত করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রজাতি হিসেবে। ডাইনোসরের যুগ থেকে এখনো বেঁচে থাকা সুবিবেচক ও পরোপকারী পিঁপড়াকে তারা পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী বিবেচনায় সংগ্রহ করে নিয়ে যায় । কল্পকাহিনির রসের সঙ্গে সমাজ, পরিবেশ ও পৃথিবী সম্পর্কে সচেতন লেখকের তীব্র শ্লেষ ও পরিহাসের মিশ্রণ গল্পটিকে বিশিষ্ট করে তুলেছে।

Content added By